Gallery

মিলাদ কি ইসলাম সম্মত কোন ইবাদত?


যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

 “মিলাদ” নামক কোন ইবাদতের অস্তিত্বই ইসলামে নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশে মীলাদুন্নবী আমদানীকারীরা ছিল শিয়া। যেমন ইসলামের মধ্যে প্রথম মীলাদ আমদানীকারক ছিল শিয়া খলীফা মুয়ীয লিদীনিল্লাহ। ভারতের মোঘল সম্রাটদের কিছু মন্ত্রী ও পরামর্শদাতা ছিল শিয়া।যেমন মোঘল সম্রাট হুমায়ূন ও সম্রাট আকবরের মা শিয়া ছিল। আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ কট্টর শিয়া ছিরেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত শিয়া ছিলেন। বাদশাহ বাহদুর শাহ শিয়া ছিলেন। তাঁরাই এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নবীর চলন করে দেন। ফলে ফিয়া- মীলাদুন্নবীর আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো সুন্নীদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে পড়ে। যেমন- আলোকসজ্জা ও মিছিল প্রভৃতি। (শায়খ আইনুল বারী আলিয়াবীর কর্তৃক রচিত ‘মীলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিকী’ পুস্তকের ৩৩ পৃঃ)

 বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীর ইবনু কাসীরের লেখক মীলাদ প্রবর্তনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ তারা কাফির ও ফাসিক। (মুহাম্মাদ বিন জামিল যাইনু রচিত বাংলা অনুবাদকৃত মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় ৭৭ পৃঃ)

 ইমাম আহমদ বসরী স্বীয় পুস্তক কওল-ই-মু’তামাদ এর মধ্যে লিখেছেনঃ চার মাযহাবের আলিমগণ মীলাদ অনুষ্ঠানের উপর দোষারোপে ঐক্যমত প্রকাশ করেছেন।

মীলাদুন্নবী উদযাপন সম্পর্কে মনীষীদের মন্তব্য

 মওলানা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী স্বরচিত তুহফা-ই-ইসনা আশারিয়া পুস্তকে লিখেছেন- কোন নাবীর জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে ঈদ উৎসবে পরিণত করা বৈধ নয়।

 শাইখ আবদুর রহমান মাগরিবী হানাফী তার ফাতাওয়ায় বলেনঃ মীলাদুন্নবীর কাজ বিদআ’ত। যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং খলীফাগণ ও ইমামগণ বলেননি ও করেননি। (তুহফাতুল কূযা-৩, তারীখে মীলাদ ১১১ পৃঃ)

 হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত আলিম আল্লামা তাজুদ্দীন ফাকেহানী মীলাদ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেছেনঃ আমি পবিত্র কুরআনে ও হাদীসে মীলাদ মাহফিলের কোন প্রমাণ পাইনি। উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বিজ্ঞ মহামতি নেতৃস্থানীয় ওলামাগণের কেউই এ কাজ (মীলাদ) করেছেন এমন কোন রিওয়ায়াতও বর্ণিত হয়নি। বরং এ মীলাদ একান্তই নব্য প্রসূত বিদআ’ত। এবং পেটপূজার জন্যই এটা আবিস্কৃত হয়েছে। (মদখুল ফাতাওয়ায়ে সাত্তারিয়া ১ম খন্ড ১৭৯ পৃঃ)

 হাফিয আবূ বকর বাগদাদী হানাফী ওরফে ইবনু নক্বতা তদীয় ফাতাওয়ায় লিখেছেনঃ মীলাদ মাহফিল সলফ বা অতীত মুসলিম সুধীবৃন্দ হতে উল্লেখিত নাই এবং ঐ সকল কাজকর্মে মোটেও কোনও মঙ্গল নাই। এটা অতীত সুধীবৃন্দ কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি।

মীলদ পাঠের নিয়ম ৫৯০ হিজরী সনে বরকুক সুলতান ফরাহ ইবনু নসরের যুগে প্রচলিত হয়। তিনি খুব আরামপ্রিয় সুলতান ছিলেন। শরীআ’তের কড়াকড়ি নির্দেশ তিনি মেনে চলতেন না। সামান্য কাজে কিভাবে বেশী সাওয়াব পাওয়া যায় তিনি এরূপ কাজের অনুসন্ধান করতেন। অবশেষে শাফিঈ মাযহাবের এক বিদআ’তী পীর প্রচলিত মীলাদ পাঠের পদ্ধতি আবিস্কার করে সুলতানকে উপহার দেন। সুলতান বড় সাওয়াবের কাজ মনে করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্ম পালনের নামে মীলাদ পাঠের ব্যবস্থা চালূ করেন। সেখান থেকেই প্রচলিত মীলাদের উদ্ভব ঘটে।

এই মীলাদের পূর্ণ বিবরণ পরবর্তীকালে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান (৬৮১ হিজরী) তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তারপর জালালুদ্দীন আস-সয়ূতী (মৃত্যু ৯১১ হিজরী) তাঁর হুসনুল মুহাযরা ফী ‘আমালিল মাওয়ালীদ গ্রন্থে ইবনু খাল্লিকানের লেখার উপর নির্ভর করে মীলাদের বিবরণ পেশ করেছেন। সুলতান মুজাফফরউদ্দীন যে মীলাদ চালু করেছিলেন তাতে যথেষ্ট খৃস্টীয় প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কারণ সে সময় ক্রুসেড যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সৈন্য সিরিয়া, জেরুজালেম প্রভৃতি এলাকায় আগমণ করেছিল। তারা যীশুখৃষ্টের জন্মদিন পালন করতো। এসব দেখে শুনে সুলতান মুজাফফরউদ্দীনের মনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস তথা মীলাদের অনুষ্ঠান করার প্রেরণা পেগে উঠে। ভন্ড সুফীদের সাথে যোযোগ রেখে তিনি ৪টি খানকাহ নির্মাণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইনতে কালের প্রায় ৪০০ বছর পর খৃস্টানদের মধ্যস্থতায় প্লাটিনাসের নূরের মতবাদ ইসলামের হিকামাতুল ইরাব বা ফালাসাফাতুল ইসলাহ নামে ইসলামী লেবাসে প্রথমে সুফিদের মধ্যে ও পরে মীলাদের মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ লাভ করে।

এছাড়াও মীলদের ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত হানাফী আলিম ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা মরহুম মাওলানা আঃ রহীম তার সুন্নত ও বিদআ’ত বইয়ের ২২৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ মীলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলোঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর এমন এক বাদশাহ প্রচলন করেন যাকে ইতিহাসে ফাসিক ব্যক্তি কলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামে আজহারের শিক্ষক ডঃ আহমদ শারবাকী লিখেছেনঃ ৪০০ হিজরীতে ফাতিমী শাসকরা মিশরে এর প্রচলন করেন। একথাও বলা হয় যে শাইখ ইবনু মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি ইরাকের মুসিল শহরে এর প্রচলন করেছেন। পরে আল মুজাফফর আবূ সাঈদ বাদশা ইরাকের ইরবিল শহরে মীলাদ চালু করেন। ইবনু দাহইয়া এ বিষয়ে একখানা কিতাব লিখে তাকে দেন। বাদশাহ তাকে এক হাজার দীনার পুরস্কার দেন- ( ইয়াসআলুনাকা আনিদ-দীনি ওয়াল হায়া-হ ১ম খন্ড ৪৭১ পৃঃ)

Leave a comment