Gallery

তাবলীগ জামাতের কিতাব ফাজায়েলে আমলে কবরের আযাব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস বিরোধী আজগুবি কিসসা-কাহিনীঃ


‘’একজন স্ত্রীলোকের মৃত্যু হইয়াছিল। তাহার ভাই দাফনের কাজে শরীক ছিল। ঘটনাক্রমে দাফনের সময় তাহার টাকার থলি কবরে পড়িয়া যায়। তখন খেয়াল হয় নাই। কিন্তু পরে যখন খেয়াল হইল, তখন তাহার খুব আফসোস হইল। চুপে পুপে কবর খুলিয়া উহা বাহির করিতে এরাদা করিল। অতঃপর যখন কবর খুলিল তখন কবর আগুনে পরিপূর্ণ ছিল। সে কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের নিকট আসিল এবং অবস্থা বর্ণনা করিয়া কারন জিজ্ঞাসা করিল। মা, বলিলেন, সে নামাজে অলসতা করিত এবং কাজা করিয়া দিত’’
ফাজায়েলে আমল; ফাজায়েলে নামাজ; মুহাম্মাদ জাকারিয়া ছাহেব কান্ধলভি; অনুবাদক- মুফতি মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ; নজরে ছানী ও সম্পাদনা হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ যুবায়ের ছাহেব ও মাওলানা রবিউল হক ছাহেব; কাকরাইল মসজিদ, ঢাকা।
প্রকাশনা- দারুল কিতাব, ৫০ বাংলাবাজার,ঢাকা; অক্টোবর ২০০১ ইং; পৃষ্ঠা নঃ ৬০

উপরোক্ত গল্পের মাধ্যমে আমরা দু’টি বিষয় বুঝতে পারিঃ
# কবরে আযাব হয়।
# কবরের আযাব মানুষ দেখতে পায়।
কবরের আযাব কুরআন ও হাদিস দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত সত্য। কবরের আযাব সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে বহু বিষয় জানিয়ে গেছেন। যাই হোক, আমাদের আলোচনার মুল বিষয় রাসুল (সাঃ) ছাড়া কবরের আযাব, যা গায়েবী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত তা অন্য কেউ দেখেছেন কি না?
==================================
কবরের আযাব গায়েবের বিষয়ঃ

যদি কবরের আযাব প্রকাশ্যে হত, তাহলে তার প্রতি ঈমান আনয়নের কোন বিশেষত্ব থাকতো না। কেননা দৃশ্যমান কোন জিনিসকে সাধারনত প্রত্যাখ্যান করা হয় না। যেমন মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ ‘’অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন বলল, আমরা এক আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সঙ্গে যাদেরকে শরীক করতাম, তাঁদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম’’ মুমিন ৮৪;
সুতরাং মানুষ যদি দাফনকৃতদের দেখতে ও তাদের চিৎকার শুনতে পেত, তখন তারা অবশ্যই ঈমান আনত। কবরের আযাব গায়েবী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। কত মানুষ কবরে আযাব ভোগ করে, কিন্তু আমরা তা অনুভব করতে পারি না। অনুরুপ কত কবরবাসীর জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, তারা ভোগ করে অফুরন্ত সুখ-শান্তি। অথচ আমরা তা জানতে বা অনুধাবন করতে পারি না। তা কেবল আল্লাহ্‌ জানেন। এবং আল্লাহ্‌ তায়ালা ওয়াহীর মাধ্যমে রাসুল (সাঃ)-কে কবরের আযাব ও সুখ-শান্তির কথা জানিয়েছেন। কবরের আযাব, তার নেয়ামত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। সুতরাং তার প্রতি যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। তবে কবরের শাস্তি ও নেয়ামতের প্রকৃতি ও স্বরূপ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি কিছু আমরা জানি না।
===================================
রাসুল (সাঃ)-কে আল্লাহ্‌ তায়ালা কবরের আযাব দেখিয়েছেন এবং রাসুল (সাঃ) ছাড়া অন্য কেউ কবরের আযাব দেখেননিঃ

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বান্দাহকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাঁকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে), তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন মুমিন ব্যাক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দাহ এবং তাঁর রাসুল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারণ করেছেন। নাবী (সাঃ) বলেন, তখন সে দুটি স্থানের দিকেই দৃষ্টি দিবে। আর কাফির বা মুনাফিক ব্যাক্তিকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি এই ব্যাক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে কি বলতে? সে উত্তরে বলবেঃ আমি জানি না, লোকেরা যা বলত আমি তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হবেঃ তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, তার আশেপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে, মানুষ ও জ্বিন ছাড়া’’
বুখারী ১৩৩৮, ১৩৭৪

এমনকি সাহাবীরা পর্যন্ত কবরের আযাব দেখেননিঃ

জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবন মুয়ায (রাঃ) যখন মৃত্যুবরণ করেন, আমরা রাসুল (সাঃ)-এর সাথে তাঁর জানাযায় হাজির হলাম। জানাযা পড়ার পর সা’দ (রাঃ)-কে যখন কবরে রাখা হল ও মাটি সমান করে দেয়া হল, তখন রাসুল (সাঃ) সেখানে দীর্ঘ সময় আল্লাহ্‌র তাসবীহ পাঠ করলেন, আমরাও দীর্ঘ তাঁর সাথে তাসবীহ পাঠ করলাম। অতঃপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরাও তাঁর সাথে তাকবীর বললাম। এ সময় রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলঃ হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ)! কেন আপনি এরুপ তাসবীহ ও তাকবীর বললেন? তিনি বললেনঃ তাঁর কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল; অতএব আমি এরুপ করলাম, এতে আল্লাহ্‌ তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন’’
আহমাদ; মিশকাত হাদীস নঃ ১৩৫; ইরওয়াউল গালীল ৩/১৬৬; সনদ সহীহ

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে কবর দু’টিতে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ ‘’এ দু’ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ বড় কোন পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না, আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত’’
বুখারী ২১৬, ১৩৬১

কবরের আযাব যদি মানুষ দেখতে পেত তাহলে কেউ দাফন কর্মে উপস্থিত হত নাঃ

যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। তোমরা মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এ আশংকা না হলে আমি আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের আযাব শুনান যা আমি শুনতে পাচ্ছি’’ মুসলিম ৭১০৫, ৭১০৬

হে আমার মুসলিম ভাই! এখন তুমি চিন্তা করে দেখ, তাবলীগ জামাতের কিতাবে কিভাবে কুরআন ও হাদীস বিরোধী ভ্রান্ত আকিদাহ পেশ করা হচ্ছে!
আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী সঠিক আকিদাহ পোষণ করার তৌফিক দান করুন।

Leave a comment